চট্টগ্রাম, ৩ জুন ২০২৫ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে আজ সকালে “চট্টগ্রামের পরিবেশ রক্ষায় আমাদের করণীয় ও নাগরিক দায়িত্ব” শীর্ষক এক সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরিবেশ, জলবায়ু ও কৃষি বিষয়ক সংগঠন এ্যাড ভিশন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম-এর সহযোগিতায় এই আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সেমিনার হলে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এ্যাড ভিশন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও পরিবেশ সংগঠক স. ম. জিয়াউর রহমান। সভাপতির বক্তব্যে কামরুল ইসলাম বলেন, “চট্টগ্রাম একসময় পাহাড়, বনভূমি, নদী ও সমুদ্রসমৃদ্ধ একটি প্রাকৃতিক শহর ছিল। কিন্তু অব্যবস্থাপনা, অবাধ পাহাড় কাটা, বন উজাড়, নদী দখল, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পবর্জ্যের কারণে আজ পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। পরিবেশ রক্ষা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, নাগরিকরাও এতে সমানভাবে জড়িত।”
সেমিনারের প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রামের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: জাহিদ হোসেন শরীফ।
তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষা একটি সামষ্টিক দায়িত্ব। আজ জলে বিষ, বাতাসে আতঙ্ক, মাটিতে মহাত্রাস। প্রতিদিন গাছপালা কাটা, নদী ভরাট, প্লাস্টিক দূষণ, এবং রাসায়নিক বর্জ্যর কারণে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৭০ লক্ষ হেক্টর জমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের দেশে ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার হলেও রয়েছে মাত্র ১৬ ভাগ। পরিবেশ দূষণের কারণে পৃথিবীতে ৮০ শতাংশ নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, হঠাৎ বন্যা—সবই এই সংকটের ফল।”
তিনি এ্যাড ভিশন বাংলাদেশের পরিবেশ ও মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, “এই সংগঠন যেভাবে পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা ছড়াচ্ছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আমি ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকবো এবং আরও বৃহত্তর পরিসরে একসাথে কাজ করার আশা রাখি।” সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও সাংবাদিক মোঃ কামাল উদ্দিন। তাঁর প্রবন্ধে তিনি চট্টগ্রামের পরিবেশের বাস্তবচিত্র, দূষণের ধরন, কারণ ও এর প্রতিকার নিয়ে তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম শহরে এখন এমনকি শিশুরাও হাঁপানিসহ বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। খালের পানি বিষাক্ত, নদী দূষিত, পাহাড়ের অস্তিত্ব বিপন্ন। এখনই যদি আমরা সকলে এগিয়ে না আসি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত শহর রেখে যাব।” সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন এ্যাড ভিশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিবেশ সংগঠক মোঃ মাসুদ রানা। তিনি বলেন, “২০০৮ সাল থেকে আমরা পরিবেশ রক্ষায় মাঠে কাজ করছি। এই বছর আমরা শহরজুড়ে গাছ রোপণ, নদী পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পরিবেশ শিক্ষার জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।” বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন: অধ্যাপক মোঃ সালাহ উদ্দিন – রেজিস্টার, ইউসিটি চট্টগ্রাম,সোহেল মোঃ ফখরুদ-দীন – লেখক ও গবেষ,এম. এ. সবুর – পরিবেশ চিন্তক,লায়ন দুলাল কান্তি বড়ুয়া – সমাজসেবী ও মানবিক সংগঠক,তাঁরা সবাই তাঁদের বক্তব্যে পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং শিক্ষার্থী ও তরুণদের এই আন্দোলনে যুক্ত হওয়ারআহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন: মোঃ গিয়াস উদ্দিন, অজিত কুমার শীল, সাংবাদিক এইচ. এম. শামীম, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এমরান, সাংবাদিক সমীরণ পাল, জোবাইদা ইয়াসমিন, ইব্রাহিম হোসাইন, সাবরিনা আফরোজা মোঃ নুর, নুরুল হুদা চৌধুরী, নিটু চৌধুরী, মোঃ আবু হানিফ, জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি, মোঃ সোহেল, মোঃ নুরউদ্দিন সহ আরও অনেকে। সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম সকল অংশগ্রহণকারী, অতিথি ও সংগঠনের সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “পরিবেশ রক্ষায় আমাদের এ যাত্রা থেমে থাকবে না। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র—সবাইকে সচেতন হতে হবে। একসাথে কাজ করলেই টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।” একটি সবুজ, দূষণমুক্ত ও সুস্থ চট্টগ্রামের স্বপ্ন দেখতে হলে এখনই সময় নিজেকে পরিবেশ আন্দোলনের অংশীদার হিসেবে ভাবা।