মা হারানো মেয়েটির নাম জান্নাহ—দেড় বছরের সেই শিশুর মুখে যেন আবার হাসি ফোটে” একজন মা যখন অকালে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান, তখন শুধু একটি জীবন থেমে যায় না—ভেঙে পড়ে একটি জগৎ, নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে একটি ঘর। ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার।এই দিনে থমকে গেল সময়, স্তব্ধ হলো আলো ঝলমলে এক জীবন। চলে গেলেন জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী, মমতাময়ী মা তানিন। একের পর এক নাটক, মিউজিক ভিডিও, টেলিভিশন শোতে প্রাণ ছড়িয়ে দেওয়া সেই তানিন এখন আর নেই। তবে তানিনের না থাকার চেয়েও যে বাস্তবতা আমাদের গলা টিপে ধরে— তা হলো তাঁর ছেড়ে যাওয়া দেড় বছরের নিষ্পাপ কন্যাশিশু। যে এখনো বুঝতে শেখেনি ‘মৃত্যু’ কী, শুধু চোখ দুটো ছুটে বেড়ায় মায়ের খোঁজে— একটুখানি ছায়া, একটুখানি সুর, একটু গন্ধ, একটু উষ্ণতা। তানিনের মৃত্যুর কারণ ঘিরে নানা গুঞ্জন— কেউ বলছেন কালো জাদু, কেউ বলছেন মানসিক নির্যাতন। তবে সত্য একটাই—একজন তরুণী মা চিরতরে নিভে গেছেন। আর তাঁর কোলের উষ্ণতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেই শিশুটি, যে হয়তো প্রতিদিন সকালে মায়ের চুলে হাত দিয়ে ঘুম ভাঙাতো, যার মুখে “মা” শব্দটি এখনো আসেনি, কিন্তু যার দৃষ্টিতে আজ “মা কোথায়?”—এই একটাই প্রশ্ন। এই প্রশ্নের জবাব আমরা দিতে পারি না, তবে আমরা পারি মেয়েটির পাশে দাঁড়াতে।
পারি, তাকে এমন এক ভবিষ্যৎ দিতে যেখানে থাকবে ভালোবাসা, স্নেহ, নিরাপত্তা আর একজন মা-মতো মানুষ। তানিনের প্রিয় সহকর্মী ও বন্ধুর মতো একজন মানুষ, তানিয়া ফারুক, ভেঙে পড়া কণ্ঠে বলেছেন—“রাতে ঘুম আসে না, চোখে ভাসে তানিনের হাসি। সকালে ফেসবুকে দেখি—কে নেবে ওর মেয়েকে, কে দত্তক নেবে! হৃদয় ভারী হয়ে যায়। একটি শিশুকে নিয়ে এভাবে কেউ কীভাবে ভাবতে পারে? মেয়েটি তো কিছুই বলতে পারছে না,
শুধু পাশ ফিরে কী যেন খুঁজছে… যেন ভাবছে, ‘সবাই আছে, আমার মা নেই কেন?’ এই দৃশ্য ভাবলেই বুক চিড়ে কান্না আসে।”
এই কান্না এক বন্ধুর, একজন সহমর্মীর, একজন মানুষরূপী মায়ের—
যার হৃদয় বুঝতে পারে, একজন শিশু মায়ের অভাবে কতটা শূন্যতায় ডুবে যায়।তানিয়া আরও বলেছেন—“আমি চাই, মেয়েটা এমন কারো কাছে থাকুক, যে সত্যিকারের মানুষ, যার হৃদয়ে মমতা আছে, যে তানিনের মতো হয়ে উঠতে পারে তার জীবনে। আমরা যারা মিডিয়াতে ছিলাম, ওর বন্ধু ছিলাম— আমরা যেন ওর খোঁজ রাখি। তানিনের মেয়েকে যেন আমরা ভালোবাসায় আগলে রাখি।” এই আহ্বান নিছক সহানুভূতির নয়—এ এক মানবতার ডাক। তানিন নেই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া মেয়ে আজ আমাদের দ্বারে। আমরা কি পারবো এই শিশুর মুখে হাসি ফিরিয়ে দিতে? আমরা কি হবো সেই আশ্রয়, যেখানে মা নেই, কিন্তু মায়ের মতো কেউ আছে? একজন মা তাঁর সন্তানের জন্য যেমন স্বপ্ন দেখে, তানিনও নিশ্চয়ই তাঁর মেয়ের জন্য এমন এক পৃথিবী কল্পনা করেছিলেন, যেখানে থাকবে নিরাপত্তা, সম্মান আর ভালোবাসা। তাঁর সেই স্বপ্ন যেন না নষ্ট হয়। আমরা যদি সবাই মিলে এগিয়ে আসি, তবে হয়তো সেই স্বপ্ন নতুন করে গড়ে উঠতে পারে। এই শিশুটির এখন প্রয়োজন— * একটি নির্ভরযোগ্য কোলে ঘুমানোর নিশ্চয়তা,
* একটি হাতে হাত রেখে হেঁটে বেড়ানোর সাহস, * একটি মুখ, যেটা “মা” ডাকের মতোই স্নেহময়। আমরা কেউ হয়তো তানিন হতে পারবো না,
কিন্তু আমরা পারি তানিনের ভালোবাসার উত্তরাধিকার হতে। আজ, এই লেখা কেবল তানিনের বিদায়ে শোক প্রকাশ নয়— এ এক দ্রোহের অনুরোধ,
একটি কণ্ঠস্বর, যা সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিতে চায়। আমরা যদি এখনই না এগিয়ে আসি, তবে আগামীকাল আর কোনো মা সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস পাবে না। তানিন নেই। তাঁর শেষ নিঃশ্বাস হয়তো মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই থেমে গিয়েছিল। আমরা যদি আজ সেই মুখে আবার হাসি ফিরিয়ে দিতে পারি— তবে হয়তো দূরে কোনো নক্ষত্র হয়ে থাকা তানিন একটুখানি শান্তি খুঁজে পাবেন। তানিনের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, আর তাঁর মেয়ের প্রতি ভালোবাসায় মোড়া মানবিক প্রার্থনা— “তুমি একা নও মা… আমরা আছি।”