চালের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙা ও রেশন কার্ড চালুর দাবিতে চট্টগ্রামে ক্যাব-এর মানববন্ধন

লেখক: মুহাম্মদ ইব্রাহিম
প্রকাশ: ৩ ঘন্টা আগে

চালের বাজারে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, অসাধু সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার চরম সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে চট্টগ্রামে সোচ্চার হয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। “চালের দাম কমাতে হবে, দরিদ্র মানুষের জন্য রেশন কার্ড চালু করতে হবে, ভাতের পাতে স্বস্তি ফিরাও”—এই মূল স্লোগান ধারণ করে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করে ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন ক্যাব-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারুল, বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মী ওসমান জাহাঙ্গীর, ক্যাব-এর যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম সভাপতি এম এ হানিফ নোমান, ক্যাব প্রকল্প কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম, কো-অর্ডিনেটর রাসেল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউসসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। চালের বাজারে অস্থিরতা এবং সিন্ডিকেটের প্রভাব

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দেশের বাজারে প্রতিদিন বাড়ছে চালের দাম। বাজারে এক শ্রেণির মিল মালিক, ডিলার ও কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা গোপন সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে। একদিকে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, অন্যদিকে সেই ধান থেকে প্রক্রিয়াজাত চাল সাধারণ মানুষের জন্য হয়ে উঠছে স্বপ্নের পণ্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে খুচরা বাজারে মাঝারি মানের চালের কেজি ৬৫-৭০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের ভাতের থালা আজ শূন্য হওয়ার পথে। বক্তারা বলেন, এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকারের দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই। বরং দেখা যাচ্ছে, কিছু কর্পোরেট কোম্পানি ও বড় মিলারদের স্বার্থরক্ষার পক্ষে প্রশাসনিক নীরবতা কাজ করছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।

রেশন কার্ড চালুর জোর দাবি ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণ জনগণ, বিশেষত দিনমজুর, শ্রমিক, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য রেশন কার্ড চালু এখন সময়ের দাবি। তারা বলেন, “একটা পরিবার যদি দিনে তিনবার খেতে না পারে, তাহলে রাষ্ট্রের উন্নয়নের সব দাবি অর্থহীন হয়ে পড়ে।” আগে যেমন দুঃসময়ে রেশন কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হতো, ঠিক তেমনিভাবে এখন আবার তা পুনরায় চালু করতে হবে— স্থায়ীভাবে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে। সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান বক্তারা সরকারের প্রতি পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন—

১. চালের বাজারে নজরদারি বাড়ানো এবং সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।

২. টিসিবি ও খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাল ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের সাশ্রয়ীমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা।

৩. দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে রেশন কার্ড চালু করা।

৪. প্রান্তিক কৃষকদের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা এবং সরাসরি সরকারি ক্রয়ের ব্যবস্থা করা।

৫. বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনতে নিয়মিত তথ্য প্রকাশ ও জরুরি ভিত্তিতে একটি ‘ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’ গঠন।

সতর্কবার্তা ও পরিণতির কথা

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আজকের এই সমস্যা নিছক খাদ্যের সংকট নয়, বরং এটি একটি মানবিক সংকট। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি সরকার এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে দেশে একটি ভয়াবহ খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্কট দেখা দিতে পারে। শুধুমাত্র কিছু ব্যবসায়ী ও মুনাফাখোরের স্বার্থে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ যেন অনাহারে না থাকে, সেই দিকে এখনই নজর দেওয়া জরুরি।

  • চালের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙা ও রেশন কার্ড চালুর দাবিতে চট্টগ্রামে ক্যাব-এর মানববন্ধন