চট্টগ্রামের কুয়াশা-ঢাকা সকাল আর কর্ণফুলীর কলকল ঢেউয়ের মতোই এক তরুণ, যিনি জীবনকে জলের মতোই স্বচ্ছ আর হৃদয়ের মতোই গভীর করে তুলেছেন—তিনি মাহবুবুর রহমান সাগর।
আমি যা কথা লিখতে বসলাম, তা কেবল কথার পর কথা নয়—তা এক মন ছুঁয়ে যাওয়া ভালোবাসার স্বীকৃতি। যার কথা বলছি, তিনি শুধু একজন মানুষ নন, তিনি এক সৃষ্টিশীল সত্তা। অসাধারণ কণ্ঠে গান গেয়ে যিনি শ্রোতাদের হৃদয়ে ঝড় তোলেন, শব্দচয়ন করেন এমন মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে যে তা হয়ে ওঠে কবিতার মতো—তিনি মাহাবুবুর রহমান সাগর। তাঁর গলায় যেন রয়েছে এক অদ্ভুত আবেগ, যেটা আবৃত্তির ছন্দে আমাদের ভেতরে ঢুকে পড়ে। তিনি যখন কথা বলেন, মনে হয় তিনি শুধু শব্দ বলেন না—গল্প বলেন, অনুভব বলেন, ইতিহাস বলেন। তাঁর বলা প্রতিটি কথা যেন গল্পে গল্পে সাজানো এক শিল্পকথা। কথার মাঝে থাকে নাটকীয়তা, থাকে চিত্রকল্প, আর থাকে হৃদয়ের গোপন ব্যাকুলতা। কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই, শুধু এক মুহূর্তেই তিনি গড়ে ফেলতে পারেন একটি জীবন্ত দৃশ্যপট—যেখানে আমরা প্রত্যেকে নিজের ছায়া খুঁজে পাই। আমার এই প্রিয়জন মাহাবুবুর রহমান সাগর, একজন শিল্পী হিসেবে যেমন উজ্জ্বল, মানুষ হিসেবেও তেমনি আত্মার কাছাকাছি। তাঁর কথা, তাঁর গানে, তাঁর সৃষ্টিতে—আমি প্রতিবার নতুন করে আবিষ্কার করি এক মানবিক সৌন্দর্য, যা সত্যিই দুর্লভ। তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং অকপট মুগ্ধতা আজ এই লেখায় তুলে ধরতে চাইলাম। আমার কলম তাঁর মতো করে কথা বলতে জানে না, কিন্তু এইটুকু বিশ্বাস রাখি—এই লেখার প্রতিটি লাইনের ভাঁজে ভাঁজে তাঁর প্রতি আমার মনের ভালোবাসা ঠিকই ধরা পড়বে।
তাঁর পরিচয় শুধু একজন সাবেক জাতীয় সাঁতারু বা সদ্য ঘোষিত সিজেকেএস সাঁতার উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি একজন বহুমাত্রিক পথিক, যিনি সাঁতার শিখিয়ে যেমন গড়েছেন শতশত কিশোর-কিশোরীর ভবিষ্যৎ, তেমনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সামাজিক আন্দোলন ও উদ্যোক্তা জীবনে রেখেছেন অবিস্মরণীয় ছাপ। সাঁতারের জগতে এক স্বপ্নচারী-জলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক যেন জন্ম থেকেই। সেই ছোট্টবেলায় যখন অন্য শিশুরা ভয় পেত পানির কাছে যেতে, তখন সাগর ছুটে যেত পুকুরে, খালে, নদীতে। সেখানেই গড়ে উঠেছিল তাঁর প্রথম সাঁতার জীবন। পরবর্তীতে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে পরিচয় করিয়ে দেন নিজেকে এক প্রতিভাবান সাঁতারু হিসেবে। তবে সাফল্য তাঁকে অহংকারী করেনি; বরং করে তুলেছে আরও উদার, আরও দায়বদ্ধ। আজও তিনি শিশুদের পানিতে নামানোর আগেই শেখান সাহস, শেখান আত্মবিশ্বাস, এবং মনে করিয়ে দেন—জীবনের প্রতিটি ঢেউ পাড়ি দেওয়া যায় যদি ভেতরটা থাকে জলের মতো স্থির।
চাটগাঁইয়া নওজোয়ান ও সমাজের pulse মাহবুবুর রহমান সাগর শুধু ক্রীড়াবিদ নন, তিনি সমাজ বদলের একজন নীরব সৈনিক। চট্টগ্রামের তরুণ সমাজ গড়ার সংগঠন ‘চাটগাঁইয়া নওজোয়ান’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অন্যতম কর্ণধার তিনি। এই সংগঠনের মাধ্যমে তিনি তরুণদের ভেতর নেতৃত্বের বীজ বপন করছেন, আয়োজন করছেন সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচি, নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাট্য প্রদর্শনী, এবং খেলাধুলার আয়োজন।এই ‘নওজোয়ান’দের হাত ধরেই তৈরি হচ্ছে আগামী দিনের মানুষ—যারা দেশের প্রতি দায়বদ্ধ, মাটির প্রতি সম্মানিত।সাংস্কৃতিক অনুরণন-সাগরের প্রতিটি কাজেই যেন এক ধরনের কবিতার ছোঁয়া আছে। কথায় আছে—যিনি জলের গভীরতা বোঝেন, তিনিই মানুষের মনের গহন কথাও বোঝেন। সেইজন্যই হয়তো তিনি এত ভালো উপস্থাপক, এত ভালো গল্পকার, গানপ্রিয় মানুষ। তাঁর কণ্ঠে যখন তিনি কোনো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন, তখন সেই কণ্ঠস্বর ভেসে আসে জলের ঢেউয়ের মতো—স্নিগ্ধ, প্রাঞ্জল, হৃদয়গ্রাহী।বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে। তিনি একাধারে ছিলেন ‘চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক পরিষদ’-এর অন্যতম সংগঠক, ‘নগর নৃত্যকলা একাডেমি’র উপদেষ্টা, এবং ‘বাংলা কবিতা উৎসব’-এর নিয়মিত আহ্বায়ক।উদ্যোক্তা জীবন: সাহস ও সততার সমন্বয় সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া জগতের পাশাপাশি তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর ব্যবসায়িক দর্শন নির্ভর করে স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও উদ্ভাবনের ওপর। তরুণদের জন্য তৈরি করেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ, উৎসাহ দিয়েছেন আত্মনির্ভরতার পথে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করা কর্মীরা বলেন—“সাগর ভাই শুধু একজন বস না, তিনি আমাদের বড় ভাই, অভিভাবক।” মাটির গন্ধে স্নান করা এক মানুষ মাহবুবুর রহমান সাগরের বড় শক্তি তাঁর বিনয়, তাঁর মানবিকতা। বড় পদে থেকেও তিনি কখনো মানুষকে ছোট করেননি। সবার সঙ্গে কথা বলেন আত্মিক আন্তরিকতায়। তাঁর বাচনভঙ্গিতে নেই কৃত্রিমতা, নেই কৌলিন্যের গন্ধ; আছে মাটির গন্ধ, ঘামের গন্ধ, ভালোবাসার স্পর্শ। তিনি যখন হাঁটেন, তখন যেন হাঁটে একজন মানুষ, যিনি নিজের সাফল্য কাঁধে করে নিয়ে চলেন না, বরং অন্যের কাঁধে হাত রেখে হাঁটার আনন্দ খুঁজে পান। আজ এই তরুণ সংগঠক, সাঁতারু, উপস্থাপক, উদ্যোক্তা ও মানবিক পথিক মাহবুবুর রহমান সাগর যখন সিজেকেএস সাঁতার উপ-কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন, তখন শুধু একটি পদ নয়, চট্টগ্রামের ক্রীড়াক্ষেত্রে নতুন প্রাণশক্তি সঞ্চার হয়। সাগর জানেন, দায়িত্ব মানে উৎসর্গ, নেতৃত্ব মানে সেবা। চট্টগ্রামবাসী বিশ্বাস করে—এই ‘জলের মানুষ’ সাঁতারের জগতে নতুন একটি স্রোতের জন্ম দেবেন, যেখানে প্রতিভা, নিষ্ঠা আর মমতার ঢেউ একত্রে ছুটে চলবে দূর গন্তব্যের দিকে। সাগরের পথ চলা থেমে নেই। জল, মাটি আর মানুষের মিশ্রণে তৈরি এই জীবন এখনো বয়ে চলছে—স্বপ্নের ধারায়, আশার নদী হয়ে…