মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি খোলা চিঠি!

লেখক: মো. কামাল উদ্দিন 
প্রকাশ: ৪ মাস আগে

“মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি খোলা চিঠি: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস মহোদয়,

শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানাই।

আপনি একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তি, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী বাঙালি হিসেবে আমরা আপনাকে নিয়ে গর্ব করি। আপনি বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন বিশ্বসভায়—সভ্যতা, মানবিকতা ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের প্রতীক হিসেবে। আপনার চিন্তা, আপনার জীবনযাপন, আপনার কথা—সবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে একজন মানুষ ভালো থাকতে পারেন, ভালো রাখতে পারেন সমাজকেও।চট্টগ্রাম আপনারই এলাকা। এই শহর আপনার জন্মভূমি, গৌরবের স্থান। এই চট্টগ্রামের বুকেই গতকাল এমন এক ঘটনা ঘটেছে, যা দেখে চোখে জল না এনে উপায় নেই।চট্টগ্রামের চিটাগং ক্লাব—দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ একটি স্থানে—একটি বিয়েবাড়ি। সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহেদ তাঁর পুত্রের বিবাহোৎসব আয়োজন করেছিলেন, যেখানে শত শত মেহমান, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সেই সামাজিক অনুষ্ঠান রূপ নিল এক অসভ্য, বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতায়।

প্রিয় উপদেষ্টা,

জাহেদ সাহেব একজন বিতর্কিত রাজনীতিক হতেই পারেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা থাকতে পারে। তিনি হয়তো কোনো দল বা মতের প্রতি অনুগত ছিলেন বা এখনও আছেন। আমরা কেউ তা অস্বীকার করি না। কিন্তু এই কারণেই কি তাঁর পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবেন? তাঁর পুত্রের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় দিনে কেন ছুঁড়ে ফেলা হলো সন্দেহের দৃষ্টি, নিরাপত্তার নামে হয়রানি, মব সন্ত্রাসের বিভীষিকা? আপনি তো সেই মানুষ, যিনি বলেন—“মানবিকতা ছাড়া উন্নয়ন অচল।” আপনি সেই মানুষ, যিনি ন্যায়ের নামে বিশ্বে সম্মানিত হয়েছেন। আপনি তো মানেন, সভ্যতা মানে শালীনতা, সহনশীলতা, আইন প্রতিষ্ঠা—না যে যার মতো রোষ উগরে দেওয়া। চট্টগ্রামের মানুষ আজ হতাশ। সামাজিকভাবে এই ধরনের হেনস্তা, এই ধরনের ‘মব সংস্কৃতি’ চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে রইলো। বিয়েবাড়ির অতিথিদের দেহ তল্লাশি, নজরদারি, এমনকি বিয়ের মঞ্চ ঘিরে ভয় ছড়ানো—এটা সভ্যতার মধ্যে পড়ে না, এটা বর্বরতা। এই দৃশ্য এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্ব দেখছে—একজন নোবেল বিজয়ীর জন্মভূমিতে এমন অশালীনতা কীভাবে সম্ভব?

মাননীয় উপদেষ্টা,

আপনি শুধু সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নন—আপনি আমাদের বিবেকের আলো, আমাদের মানবিকতার মুখপাত্র। আপনি বারবার আমাদের শিখিয়েছেন, সহনশীলতা ও সংযম কাকে বলে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ আপনাকেই অনুরোধ জানাতে চাই—আপনি আমাদের বলুন, আমরা কি সত্যিই এমন দেশ চেয়েছিলাম? যেখানে পরিবারের বন্ধনে, সামাজিক সম্পর্কের নিঃস্বার্থ আনন্দেও রাজনীতি ঢুকে পড়বে? যেখানে কেউ একজন বিতর্কিত হলেই, তাঁর সন্তানের জীবনেও ছায়া ফেলবে অপমান আর লাঞ্ছনার? আপনার নিকট আমরা অনুরোধ করি—একটি বিবৃতি দিন, একটি আশ্বাস দিন। আমরা চাই, আপনি এই চিঠির ভাষা শুনুন—এ চিঠি এক সাংবাদিকের নয়, একজন চট্টগ্রামবাসীর, একজন বিবেকবান মানুষের, এক পিতার হৃদয়ের আকুতি।

মাননীয় উপদেষ্টা,

চট্টগ্রামকে আপনি সম্মান দিয়েছেন বিশ্বমঞ্চে। আজ এই চট্টগ্রামের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। আপনি এই অসম্মানকে সম্মানে রূপ দিন। সমাজে যেন আর কেউ এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি না হয়। আপনার সাহসিকতা, সহমর্মিতা, এবং নেতৃত্বে আমাদের আস্থা আছে। আমরা বিশ্বাস করি—আপনি এই সভ্যতা রক্ষা করবেন।

শ্রদ্ধাভরে,

মো. কামাল উদ্দিন

লেখক,সাংবাদিক, টেলিভিশন উপস্থাপক,  –মহাসচিব, চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরাম।

  • মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের প্রতি খোলা চিঠি!